মোঃ আজগার আলী,সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: অনুমোদনহীন যানবাহনের চাপ ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় সাতক্ষীরা শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চার কারণে সাতক্ষীরা শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটে দুর্ভোগে নাকাল লাখো মানুষ। আজ বুধবার ৫ই জুলাই সরজমিনে দেখা গেছে, শহরের শহীদ কাজল স্বরনি সড়কে অনুমোদনহীন যানবাহনেরে চাপ ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় সাতক্ষীরা শহরে যানজট সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা শুধু বুধবার নয়, প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। প্রতিদিন সকাল ৯টার পর থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৫টার পর থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত যানজটে নাকাল হচ্ছে সাতক্ষীরা শহরবাসি। সূত্রমতে, শহরের শহীদ কাজল স্বরনি সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, সড়কের প্রস্থ কম হওয়াসহ চার কারণে সাতক্ষীরা শহরে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ যেতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এ কারণে শহরবাসির একদিকে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

 

সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পৌরসভায় ২০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক আছে। শহরের মধ্যে রয়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম। সড়কের পাশে নেই ফুটপাত। তাছাড়া সড়কে যত্রতত্র বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো হয়। এসব কারণে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।

 

সূত্রমতে, চার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে-বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো। অবৈধভাবে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান চলাচল। সড়কের প্রস্থ কম হওয়া এবং পাশে ফুটপাত না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং।

 

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সড়কের দুই পাশ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি দখল করে রেখেছে অনেক জায়গা। সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। এতে শহরে যানজট হচ্ছে। শহরের শহীদ নাজমুল সরণি, শহীদ কাজল সরণি, শহীদ সিরাজ সরণি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের শহীদ আলাউদ্দীন চত্বর থেকে ইটাগাছা পর্যন্ত, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের নিউ মার্কেট থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত, তুফান মোড়, সুলতানপুরের কেষ্টময়রার মোড়, বড়বাজার মোড়, পুরোনো সাতক্ষীরায় যানজট বেশি থাকে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে অবস্থান করে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক ও সাতক্ষীরা-যশোর সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট চলছে। যানজটের কারণে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ফুটপাত না থাকায় মানুষ হেঁটেও যাতায়াত করতে পারছে না।

 

সাতক্ষীরা নাগরিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভার সড়কের প্রস্থ ১৮ থেকে ২৪ ফুট। যেভাবে জনসংখ্যা বেড়েছে ও শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তাতে সড়কের প্রস্থ ৩৩ ফুট করা জরুরী।

 

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ৫০ বছরে এই শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪/৫ গুন। আর প্রতিদিন শহরে চলাচলকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৫/২০গুন। বিশেষ করে শহরতলীর পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার মানুষ চা খেতেও এখন শহরে আসে। এক সময়ে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ উপজেলার মানুষ শহরে আসার জন্য ১৫দিন পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিত। নদী পথে আসতো। ২/৩দিন শহরে থেকে কাজ মিটিয়ে ফিরে যেত। কিন্তু এখন জেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকার মানুষও যখন মনে করছে শহরে আসছে, আবার কাজ মিটিয়ে চলে যাচ্ছে।

 

কিন্তু ৫০ বছর পূর্বে রাস্তা ঘাট যেমন ছিল আজও তেমনই আছে। শহরের কোন রাস্তার প্রশস্থ করা হয়নি। তাছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তায় ধীর গতিতে চলাচলের কারণে সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। এক সময়ে সাতক্ষীরা শহরে দূর দুরন্ত থেকে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম প্রাণসায়র খালের নৌপথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে সাতক্ষীরা শহরে এখন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষ এসে শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। এসব জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষ শহরে এসে কেউ ভ্যান চালিয়ে, কেউ ইজিবাইক চালিয়ে সংসার নির্বাহ করেন। যে কারণে শহরে ব্যাটারি ভ্যান ও ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরু সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

 

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডঃ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, সাতক্ষীরা শহরে এক দশকে লোকসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে যানবাহন বেড়েছে। কিন্তু সড়কের প্রস্থ বাড়েনি। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। বর্তমানে ছোট্ট এ শহর ঘিরে প্রায় সাত হাজারের মতো ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান চলে। ইঞ্জিনচালিত ভ্যানও চলে কয়েক হাজার। যে কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া যত্রতত্র পার্কিং করার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ৫মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে ৫০মিনিট।

 

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি জানান, শহরে নিবন্ধিত ইজিবাইকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চলাচল করছে। নিবন্ধন না থাকার পরও ইঞ্জিচালিত ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান চলছে। এসব আটকাতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

 

শহরে যানজট বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে মেয়র তাসকিন আহমেদ বলেন, যেসব এলাকায় যানজট বেশি হয় সেসব এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যানজট দূর করতে সড়কের প্রস্থ ২৪ ফুট করা হয়েছে। তবে পরিবহন কাউন্টারগুলো শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। সেখানে পার্কিং সুবিধা না থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।